প্রশ্নঃ ব্যায়াম বা শরীর চর্চার বিষয়ে ইসলাম কি বলে?
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে এটি সু প্রমাণিত বিষয় যে, ব্যায়ামে শারীরিক বিভিন্ন উপকার
হয়, মানসিক উদ্যম তৈরি হয়, টেনশন, অস্থিরতা, অবসাদ, দু:শ্চিন্তা, হাতাশা ইত্যাদি
দূর করতে সহায়তা করে, বাড়তি ওজন কমায়, সুস্থ ও সুঠোম দেহের অধিকারী হওয়া যায়
এবং নানা ধরণের রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হয়। আর ইসলামের একটি মূলনীতি হল,
দুনিয়াবি যে সকল কাজ দ্বারা মানুষের কল্যাণ হয় তা জায়েজ যতক্ষণ না পর্যন্ত তাতে
শরিয়া বিরোধী কোন কিছু থাকে। সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যায়াম বা শরীর চর্চায়
কোন আপত্তি নেই। তবে শর্ত হল, এতে হারাম ও শরিয়া বিরোধী কোন কিছু থাকতে পারবে না।
যেমনঃ ১) ব্যায়াম এর সৎ উদ্দেশ্য থাকা যেমন: সুস্থাস্থ , ফিটনেস, ব্যাথা-বেদনা ও
রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি, শারীরিক শক্তি অর্জন, মানসিক উদ্যম তৈরি, আল্লাহর পথে
জিহাদের প্রস্তুতি, আত্মরক্ষা, শত্রুর মোকাবেলা ইত্যাদি। ২) পোশাকের বিষয়ে সচেতন
থাকা ব্যায়ামের জন্য এমন পোশাক না পরা যাতে লজ্জা স্থান এবং শরীরের গোপন অঙ্গগুলো
বাইরে দৃশ্যমান হয়। সেই সাথে বিপরীত লিঙ্গের পোশাক না পরা। ব্যায়ামের সময় সতর ও
লজ্জা স্থান খোলা যাবে না। ৩) মিউজিক বর্জন করা মিউজিক বা গান-বাজনার তালে তালে
ব্যায়াম করা হারাম। ৪) পর্দা রক্ষা করা পর পুরুষ-নারী একসাথে ব্যায়াম করা হারাম।
৫) শারীরিক ক্ষয়-ক্ষতির দিক নজর রাখা যে সকল ব্যায়াম এ শারীরিক ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার
সম্ভাবনা আছে সেগুলো করা যাবে না। ৬) ইবাদতে অবহেলা না করা ব্যায়াম করতে গিয়ে
সালাত, সিয়াম, জিকির-আজকার ইত্যাদি ইবাদতের প্রতি যেন অবহেলা প্রদর্শিত না হয়। ৭)
সময় নিয়ন্ত্রণ করা সীমাতিরিক্ত এবং দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম করা উচিৎ নয় যাতে তার
পরিবার, পড়াশোনা বা নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় বা প্রচুর
সময় অপচয় হয়। ৮) ব্যায়াম এর সঠিক স্থান নির্বাচন ব্যায়াম করার জন্য এমন
জিমনেশিয়াম বা ব্যায়ামাগারে যাওয়া বৈধ নয়, যেখানে গান-বাজনা, ধূমপান, মদপান,
পুরুষ-নারীর অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি আল্লাহর নাফরমানি সংঘটিত হয়। সুতরাং এ সকল শর্ত
সাপেক্ষে কেউ যদি ব্যায়াম করে তাহলে ইনশাআল্লাহ ইসলামের দৃষ্টিতে তাতে কোন আপত্তি
নাই। দয়াময় আল্লাহ আমাদেরকে সুস্থাস্থ্য দান করুন যেন, আমরা সুস্থ দেহ ও সুস্থ
মনে পূর্ণ উদ্যমে দুনিয়াবি কাজ-কারবার করার পাশাপাশি দৃঢ়ভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে
পারি এবং প্রয়োজনে এই দেহ ও শক্তিমত্তাকে জিহাদের ময়দানে শত্রুর মোবাবেলায়
ব্যবহার কতে পারি। উত্তর প্রদানেঃ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (লিসান্স,
মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব) দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স
সেন্টার, সউদী আরব।
0 মন্তব্যসমূহ