ইসলাম গ্রহণের পরে মুসলিম হিসেবে আমাদের কী দায়িত্ব রয়েছে?
কালিমা শাহাদাত পড়ে ইসলাম গ্রহণের পরেই কারও দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং তখন থেকে মুসলিম হিসেবে তাঁর উপরে কিছু দায়িত্ব শুরু হয়। আজকের নিবন্ধে সেরকম গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করা হবে।
১) একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা
“তোমাদের রব আদেশ করেছেন যেন তোমরা তাঁকে ব্যতীত আর কারও ইবাদত না করো।” (আল কুরআন-১৭:২৩)
সুতরাং, একক উপাস্যরূপে আল্লাহ তা’আলার স্বীকৃতি প্রদান, পরিপূর্ণ নিষ্ঠাসহকারে তাঁর ইবাদত করা এবং জীবনের প্রতিটি বিষয়ে তাঁর হুকুমের সমানে আত্মসমর্পণ করা। একজন মুসলিমের জীবন আল্লাহর সামনে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ হওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
২) পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও দয়ালু হওয়া
“তোমরা মাতাপিতার প্রতি দয়া করো। যদি তাদের একজন কিংবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাদের ব্যাপারে ‘উহ’ পর্যন্ত বলো না, অথবা তাদের ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণভাবে কথা বলো। তাদের প্রতি ভালোবাসার সাথে, অত্যন্ত নম্র ও বিনয়ী আচরণ করো; এবং বলো, হে আমাদের পালনকর্তা তাদের উভয়ের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা শৈশবে আমার প্রতি দয়া করেছেন।” (আল কুরআন-১৭:২৩-২৪)
মাতাপিতার প্রতি সন্তানের ভক্তি হলো মুসলমানদের দ্বিতীয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার। যদিও পিতামাতা মুশরিক বা কাফের হোক না কেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও দয়া আমাদের জন্য নিছক সামাজিক দায়িত্ব নয়। বরং মুসলিম হিসেবে এটি আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা।
৩) সম্পদের অপচয় না করা এবং দ্বীনি কাজে সম্পদ ব্যয় করা
“তোমরা সম্পদের অপচয় করো না। নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই আর সে বরাবরই তার প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।… তুমি একেবারে কৃপণ হয়োও না এবং হয়োও না একেবারে মুক্তহস্তও।” (আল কুরআন-১৭:২৬-২৭)
সম্পদের ব্যাপারে অপচয়ী বা কৃপণ কোনোটিই ভাল নয়। অপচয় করা অনুচিত; আবার কৃপণ হওয়াও ঠিক নয়। ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনে মুসলমান অঙ্গীকারবদ্ধ।
উপার্জনের ক্ষেত্রেও হালাল পন্থায় উপার্জন করতে হবে। আর উপার্জিত অর্থও সঠিকভাবে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করা উচিত। দূরদর্শিতার সাথে এবং বিবেকসম্মত উপায়ে সম্পদের সদ্ব্যবহার করা প্রতিটা মুসলিমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
৪) সন্তানাদির যত্ন নেয়া
“তোমরা তোমাদের সন্তানদের দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করো না; তাদের এবং তোমাদেরকে আমিই রিযিক দিই। তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।” (আল কুরআন-১৭:৩১)
মাতাপিতার অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সন্তানের অধিকারেরও স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। সন্তানরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে আমরা সন্তানদের বুদ্ধিমান এবং নৈতিক দায়িত্বসচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। তাদের নিরাপদ ও সুস্থ পরিবেশে লালনপালন করার ব্যাপারে মুসলিমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
৫) ব্যভিচার ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে দূরে থাকা
“তোমরা অবৈধ যৌন সম্পর্কের নিকটবর্তীও হয়ো না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (আল কুরআন-১৭:৩২)
যৌনবিকৃতি ব্যক্তি ও সমাজের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ। বিশুদ্ধ, সামাজিক দায়িত্বশীলতাপূর্ণ জীবনযাত্রার বিষয়ে মুসলমানরা অঙ্গীকার বদ্ধ।
ইসলাম শিক্ষা দেয়, ব্যভিচার বা যৌন অনাচারের নিকটেও যাওয়া উচিত নয়। এর তাৎপর্য হলো- নারী-পুরুষের পোশাকের ব্যাপারে যথাযথ বিধিবিধান মেনে চলা, মিশ্রসমাজে সঠিক আচরণ বজায় রাখা এবং সামাজিক সম্পর্ক ও বিনোদনের ক্ষেত্রে নিজেকে যথার্থ নিয়ন্ত্রণ করা।
৬)অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি পূরণ করা
“আর অঙ্গীকার পূরণ করো। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (আল কুরআন-১৭:৩৪)
ওয়াদা ও চুক্তি রক্ষা করা মানবজীবন ও মানব সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ওয়াদা বা অঙ্গীকার পূরণ করলে মানুষ পরস্পরের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং তখন গোটা সমাজব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। একাওরণে মুসলিম হিসেবে অবশ্যই নিজ নিজ অঙ্গীকার পূরণে সচেতন হতে হবে।
৭) বিনয়ী হওয়া এবং অহংকার ত্যাগ করা
“পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় তুমি কখনও ভূপৃষ্ঠকেও বিদীর্ণ করতে পারবে না আর উচ্চতার দিক থেকে কখনও পর্বতসমও হতে পারবে না।” (আল কুরআন-১৭:৩৭)
উদারতা, নমনীয়তা ও অহংকার ত্যাগ করে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ হচ্ছে মানুষের আচরণের সর্বোৎকৃষ্ট বিষয়। একের প্রতি অন্যের মনোভাবের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। মুসলিম হিসেবে আমরা মর্যাদাবান, আবার একইসাথে বিনয়ী। কোনো মুসলিম অহংকারী, দাম্ভিক ও উদ্ধত আচরণ প্রদর্শন করতে পারে না। প্রতিটি জিনিসের জন্য চূড়ান্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং তিনিই প্রকৃত গৌরবের অধিকারী।
ইসলাম গ্রহণের পরে এরকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আমাদের উপর বর্তাবে। এসকল দায়িত্ব যদি আমরা যথাযথভাবে পালন করতে পারি তবেই আমরা প্রকৃত মুসলিম হতে পারব।
0 মন্তব্যসমূহ